বিবর্ণ ধূসর সময়ের প্রান্ত ছুঁয়ে সমাজদেহে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি। সমাজ দেহের অণু-পরমাণুতে বিস্তার লাভ করছে অবক্ষয়ের জীবাণু। সমাজ জীবনের অবারিত প্রাঙ্গণ ধুলোর আস্তরণ জমে একাকার। সত্য, সুন্দর সামাজিক গতিময় প্রবাহ পারিপার্শ্বিকতায় মলিন হয়ে নৈরাশ্যের ছায়াপাতে বিধ্বস্ত। প্রবহমান সমাজ জীবনের মোড় ঘোরে সমাজব্যবস্থার পুঞ্জীভূত অসংখ্য অসঙ্গতি, বৈপরিত্য, দ্বন্দ্ব, অমানবিকতার আবর্তে আচমকা একরাশ খোলা হাওয়ায় উড়িয়ে নেয় সকল মানবিক পরিচর্যা ও প্রত্যাশা। ঝলমলে আকাশটা ঢেকে যায় কালো মেঘের অনিবার্য দাপটে। সমাজ থেকে সামাজিকতার বোধ অন্তর্হিত। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে মানুষের এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় মানুষ আজ হাতের মুঠোয় পৃথিবীর তাবৎ রহস্য উন্মোচনে প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত। সমাজে মানুষ আজ পাশবিকতার চাদর মুড়িয়ে, হিংসা-বিদ্বেষ, নির্মমতার পাশ কাটিয়ে মানবিক উন্নয়নে নতুন আশায় জাগ্রত হতে পারছে না। কিছু অস্বাভাবিকতা, কিছু ব্যতিক্রম, কিছু সংকীর্ণতা, স্বার্থপরায়ণতা ও কিছু মূল্যবোধহীনতার নেতিবাচক দিক সমাজে বেড়ে ওঠা গোটা প্রজন্মের সামনে চিত্রিত।
চারদিকে চলছে এক স্নায়ুবিক ও মানসিক অস্থিরতা। জীবনপ্রবাহে নানা ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা থমকে দাঁড়ায়। বিশ্বসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প ও প্রযুক্তি নিয়ে সম্মুখ পানে। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার নবতর চাকচিক্যে প্রচলিত নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মুখথুবড়ে পড়ে আছে। ক্রমশই বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা এবং ছিন্ন হচ্ছে সামাজিক স¤পর্ক। দেশে দেশে চলছে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম দুর্ভিক্ষ। অবক্ষয়িত সমাজ ব্যবস্থায় অস্থির সমাজবদ্ধ মানবকুল। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম দুর্ভিক্ষে সামাজিক শৃঙ্খলা লুপ্ত প্রায়। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধের চেতনার বীজ বপিত হলেও কমেছে উর্বরতা। সংবাদপত্রের প্রতিদিনের ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নারী নির্যাতনের খবর প্রায়ই লজ্জায় নুইয়ে দেয় মাথা। উৎসবের মৌসুমে শঙ্কা বেড়ে যায়। বর্ষবরণের রাত নির্বিঘেœ কাটবে তো এ শঙ্কায় ত্রস্ত মানুষের উদ্বিগ্ন মন। বিপদ ঘনিয়ে আসলে ও পাশে পাওয়া যাবে না কাউকে, আর্তিতে কেউ সাড়া দেবে না, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় মিলবে না এমন ধারণা আজকাল বদ্ধমূল অনেকের মধ্যেই। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস এর জায়গাটা প্রায় শূন্যের ঘরে। এতসব হতাশাব্যঞ্জক ও নেতিবাচক অনুষঙ্গ আমাদের সরলীকৃত চিন্তাভাবনায় তৈরি করেছে আস্থার সংকট। তবুও নতুন প্রজন্ম সামাজিক প্রবাহের নেতিবাচক স্রোতের টানে ভেসে যেতে পারে না।
সামাজিক অবক্ষয়ের ক্রান্তিলগ্নে সুশীল সমাজের দিক-নির্দেশনায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। সামাজিক স্থিতিশীলতা, মূল্যবোধের চর্চা ও বিকাশ সাধন, পার¯পরিক সৌজন্যবোধ, আদর্শিক মানবীয় গুণের শিশুরা মাতা-পিতা থেকে যে রকম নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে, সে শিক্ষা নিয়েই তারা বড় হতে থাকে এবং সে শিক্ষা জীবন তাদের চলার পথের পাথেয় স্বরূপ। ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দেয়। কারণ ধর্মই মানুষকে নৈতিকতা শিখায়। সব ধর্মেই এই শিক্ষা রয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ যাদের অন্তরে থাকবে তারা কখনো বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে পারে না। এর জন্য পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটিই দায়ী। পরিবারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সন্তানকে মানুষ করা যায় না। সন্তানকে আপত্য হে ভালোবাসা দিতে হয়। সন্তানকে সময় দিতে হয়। তাকে নৈতিকতা অর্জনের পথে চলার জন্য বুঝাতে হয়, উদ্বুদ্ধ করতে হয়। পিতা-মাতার যত রকম বিনিয়োগ আছে সবকিছুর ওপরে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে তার সন্তান। সন্তানই জীবনের সবচেয়ে বড় স¤পদ। এটা সবাইকে বুঝতে হবে এবং মানতে হবে। পরিবার হচ্ছে এখানে মূল বিষয়। নিয়ন্ত্রণ পরিবার থেকেই করতে হবে।
ধর্মীয় নেতাদের মতে এটা সামাজিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ পরিণতি। সমাজ থেকে আদর্শিক তথা ধর্মীয় মূল্যবোধ একেবারেই চলে গেছে। আকাশ সংস্কৃতি, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের অবাধ ব্যবহার, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা আমাদের তারুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিরোধের দেয়াল হিসেবে কাজ করার কথা ছিল সেই শিক্ষা তো এখন নেই। ফলে নৈতিক অবক্ষয় মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে গুরুর মর্যাদা যে বিলুপ্তপ্রায় সেটি অনুধাবন করা যায়। চার বছর বয়সে গৃহ বিদ্যাপিঠে আমি ছাত্রত্বের ও চরিত্র গঠনের তাগিদ পেয়েছিলাম। আমার প্রথম পঠিত বইটি ছিল শ্রী প্রণত বসাক রচিত ‘আদর্শ লিপি’। সেখানে স্বর লিপি ও ব্যঞ্জন লিপি দিয়ে তৈরি বাক্যগুলো ছিল নৈতিক চরিত্র, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, শ্রদ্ধা-ভক্তি শেখার অগ্রপাঠ।
যেমন: স্বর লিপি, ব্যঞ্জন লিপি
অ = অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর। ক = কর্ম কর ভালো রবে। আ = আলস্য দোষের আকর। খ = খর্ব করিও না। ই = ইক্ষু রস অতি মিষ্টি। গ = গুরুজনে কর নতি। ঈ = ঈশ্বরকে বন্দনা কর। উ = উগ্রভাব ভালো নয়। ইত্যাদি।
আর বর্তমানে শিশু শিক্ষা নামে কোনো বই বাজারে আছে বলে আমার জানা নেই। আর যদি থেকেও থাকে তবে তার ভিতরে কী যে আছে তা হয়ত আপনাদের অজানা নয়। শিশুদের জন্য রচিত এক চকচকে মলাটের বইয়ে অদ্ভুৎ কিছু অশিক্ষা দেখলাম। যেমনটি লেখা ছিল;
অ = অন্যের গাছে আম ধরে। আ = আমটি আমি খাব পেড়ে। ই = ইঁদুর ছানা ভয়ে মরে। ঈ = ঈগল পাখি আকাশে উড়ে।
আসলে দোষটা যে কার সে বিষয়টি আমি এখনো বুঝতে পারছি না, শিক্ষা ব্যবস্থার নাকি শিক্ষার্থীদের? যে শিক্ষায় নৈতিক চরিত্র, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, শ্রদ্ধা-ভক্তি নেই, সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা অসারতা ছাড়া আর কিছুই না। ছোট সময়ে পাঠশালার গুরুজনরা আমাদের ভুলের কারণে শাস্তি হিসেবে কান ধরে উঠবস করাতেন। আর এ যুগে দেখি গ–মূর্খের দল শিক্ষা গুরুকেই কান ধরে উঠবস করায়। এ হলো আমাদের গুরুর মর্যাদা। গুরুজনদের শেষকালের পরিণতি যে তত একটা সুখকর হবেনা সেটা পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ আছে। তবে সাথে গুরুদের ভক্তি না করলে তার ভয়াবহতাও অসহনীয় কঠিন হবে সেটিও বলা হয়েছে।
একজন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের চর্চাকারী হিসেবে বিশ্বে বহুল প্রচলিত ধর্মসমূহ ও ধর্মগ্রন্থ সমূহ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে বলে আত্মবিশ্বাস আছে। কোনো ধর্মগ্রন্থেই গুরুর মর্যাদা নিয়ে আপোস করেননি। আমার ন্যূনতম ধারণার আলোকে পবিত্র বাইবেলেই গুরুর সম্মান হিসেবে গুরুকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। আমি শুরুতেই পবিত্র বাইবেলের নিম্নোক্ত পদটি তুলে ধরতে চাইÑ
“তাঁকে (গুরুকে) শিরোধার্য কর, সে তোমাকে উন্নত করবে, যখন তাকে (শিষ্যকে) আলিঙ্গন কর, সে তোমাকে মান্য করবে।”Ñ(হিতোপদেশ ৪ : ৮) ছেলে-মেয়েরা পাপ নিয়ে জন্মায় বলে তারা স্বাভাবিক ভাবেই পাপের দিকে ফেরে। কেননা শাস্ত্র বলে; “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসন-দ- তা তাড়িয়ে দিবে।-(হিতোপদেশ ২২ : ১৫)
বর্তমান সময়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে অধিকাংশ যুবকের নৈতিক অবক্ষয় ও পতন দেখা যাচ্ছে। কারণ, তারা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনুকরণে ব্যস্ত । পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঘেরাটোপে যুব সমাজ এক ধরনের আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে পোশাক-আশাক, চলা-ফেরাসহ যাবতীয় বিষয়ে পশ্চিমাদের অনুকরণ করছে। যুব সমাজকে ধ্বংসের উপকরণ অসংখ্য ও অগণিত। যেমন, মোবাইল, ক¤িপউটার, রেডিও, টেলিভিশন, নগ্ন ম্যাগাজিন ইত্যাদি। এগুলো যুব সমাজকে ধ্বংস করা ও তাদের চরিত্রকে হরণ করার জন্য খুবই ক্ষতিকর ও বিষাক্ত মাধ্যম। যদিও আমরা জানি প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলি আমাদের জন্য একদিকে আশীর্বাদ কিন্তু অন্যদিকে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুবকরা নিজেদের ক্ষতিকর দিকসমূহ বুঝতে না পেরে এ সবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। যুব সমাজ যদি এ সব ক্ষতিকর উপসর্গ থেকে নিজেকে রক্ষা করে তাহলে নিজেদের কল্যাণকে নিশ্চিত করবে। কারণ, এসবের পরিণতি খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকর। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান। সংস্কৃতি মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বর্তমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের যুগে সুস্থ ও নির্মল সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অপসংস্কৃতির ছোঁয়ায় সুস্থ সংস্কৃতির ধারা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। অপসংস্কৃতির কারণে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েও ধ্বংস-উন্মুখ সভ্যতায় পরিণত হতে চলেছে উন্নত দেশগুলো। ফলে খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি ও অপরাধ সংস্কৃতি তাদের জীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই সমাজের অঃধপতন হচ্ছে। বাড়ছে অশান্তি। যুব সমাজ হচ্ছে জাতির হৃৎপি-। সমাজে যুবকরা যখন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, সৎ ও ভালো কর্ম করবে, তারা তাদের মর্যাদা ও অবস্থান স¤পর্কে অবগত হবে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, তখনই দেশে শান্তি আসবে এবং দেশ ও জাতি বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কতিপয় দেশে সন্ত্রাসবাদ একটি বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখা যায় কেউ অস্ত্র ধারণ করে নিজেকে রক্ষার জন্য, স্বাধিকার আদায়ের জন্য, কারো কাছে এটি জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ, আবার কারো কাছে এটি দাবী আদায়ের পন্থা কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রাম। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ ও মানবজাতির সীমাহীন অসম্মান বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি বিষয়। আমরা যদি বর্তমান সময়ের আলোচিত কিছু ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করি তবে জঙ্গিবাদ বিষয়টি প্রথমে উঠে আসবে। এই জঙ্গিবাদের কারনে যেমন সাধারন মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে আবার জঙ্গিদের রেশ ধরে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতন করছে একটি দেশের সেনাবাহিনী। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের সাথে নতুন প্রজন্ম যেভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে তাতে বৈশ্বিক নৈতিক বিপর্যয় অনিবার্য। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে যাবার পেছনে অতি স্বাধীনচেতা ও ধর্মগ্রন্থের সঠিক অনুসরণের অভাব আছে বলে আমি মনে করি। ধর্মীয় উগ্রবাদ দিয়ে উগ্রবাদী সন্ত্রাস রুখা যাবে না। উগ্রবাদকে রুখতে হলে ধর্মীয় নমনীয়বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং সেমতে শাসনের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে।
অনেকে বলে থাকেন শিশু কোন পাপ নিয়ে জন্মায় না। সে যেন একটা নতুন নোটবুক; যা সে শিখবে বা বুঝবে তাই লিখিত হবার জন্য যেন সেই নোটবুক অপেক্ষা করে আছে। সেই সব শেখা বা বোঝা থেকেই সে ভালো অথবা খারাপ হবে। যারা এ কথা বলেন তারা মনে হয় কখনও লক্ষ করেননি। জন্মের পরথেকেই তারা স্বার্থপর হয়, নিজের ইচ্ছামতো চলতে চায়। ক্লান্ত মায়ের জন্য তাদের কোন চিন্তা নেই। ক্ষুদা পেলে তখনই তাদের খেতে দিতে হবে। যখন বাচ্চারা খেলা করে তখন লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন তারা মারামারি করে এক জন অন্যকে আঘাত করে এবং নিষ্ঠুর ভাবে একে অন্যের সাথে কথা বলে। তাদের আবদার দেওয়া না হলে চিৎকার করে কাঁদে। তাহলে দেখা যায় তারা নির্দোষ হয়ে জন্মায় না। এই সত্যই প্রধান কারন যার জন্য নতুন প্রজন্মকে শাসনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে (অধিকাংশ) পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিভিশন ও রেডিও ব্যবহার করে যে বিষয়গুলো অর্জিত হয় তা কতটা আমাদের প্রজন্মের জন্য মঙ্গলময় তা কিন্তু ভাবনার বিষয়। একটা সময় ছিল যখন শিশুদের খেলনার জন্য মাটির আসবাবপত্র, দড়ি, ঘোড়া, লাটিম, বল ইত্যাদি ব্যবহার হত। বর্তমানে সেখানে খেলনা পিস্তল, তরবারী, সফ্টওয়ার গেম ইত্যাদি ব্যবহার হয় যার মাধ্যমে প্রতিহিংসা ও আক্রমণ করা শিখে। এগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আমারা যেমন আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারাচ্ছি, তেমনি কোমলমতি শিশুদের মানসিকভাবে ক্ষুদে সন্ত্রাসবাদ শিখাচ্ছি। শুধু বিভিন্ন ধরনের হামলা কিংবা তা-ব চালালেই সন্ত্রাসবাদ বলা যাবে না। অনেক অদৃশ্য সন্ত্রাস বর্তমানে তৈরি হচ্ছে। এর জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাগুরুদের অবমূল্যায়ন করাকে আমি দায়ী করছি। প্রত্যেক মানুষের অবশ্যই একজন না একজন গুরু আছেন। কেউ যদি বলেন আমার কোনো গুরু নেই তাহলে তার জন্য দার্শনিক এরিস্টটল এর সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই, ‘যার কোনো গুরু নেই সে হয় জন্তু, না হয় প্রেতাত্মা’। গুরুকে ও তার শিক্ষাকে যদি শিরোধার্য না করি তবে ধর্ম ও গুরু উভয়কেই অবজ্ঞা করছি। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অধার্মীকতার প্রভাব থাকায় নৈতিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উগ্র সন্ত্রাসবাদ থেকে উতরানোর উপায় হল নৈতিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ দমনেও নৈতিকতা চর্চা কোনো বিকল্প নেই।
এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ : গবেষক ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব শিক্ষক।